খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় ৩ মার্কিন চিকিৎসক আসছেন কাল 

 যুগান্তর প্রতিবেদন 
২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:২৯ পিএম  |  অনলাইন সংস্করণ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় আসছেন তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা আগামীকাল ঢাকায় আসছেন।

বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেখানে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে তার চিকিৎসা চলছে। তারা বারবার খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে আসছে। তবে সরকার এ বিষয়ে সাড়া দিচ্ছে না।

বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলে থাকছেন একজন হেপাটোলজিস্ট, একজন ইন্টারভেনশনিস্ট ও একজন নেফ্রোলজিস্ট

যুক্তরাষ্ট্রের এই বিদেশি চিকিৎসকদের আসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ঢাকার চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বিদেশি চিকিৎসক আনার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের তিন চিকিৎসকের আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানিয়েছেন, ঢাকায় মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠকের মাধ্যমে রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের যে চিকিৎসকদের সঙ্গে তারা এত দিন সমন্বয় করছিলেন, তাদের মধ্য থেকে তিনজন বুধবার ঢাকায় আসবেন।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান মঙ্গলবার যুগান্তরকে জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে বারবার সরকারের কাছে বলার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তিনি দুই মাসের বেশি সময় ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত দুই মাসে ইতোমধ্যে ৫ বার করোনারি কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছিল। এখন পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের অবস্থা উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। বারবার আমরা বলে আসছি উনার অবস্থা উদ্বেগজনক। সোমবার রাতেও তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়েছে। 

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মঙ্গলবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ তথ্য জানান।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মঙ্গলবার সকালে ম্যাডামের চিকিৎসকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বেশ উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, ৯ আগস্ট থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া। এরমধ্যে বেশ কয়েক দফা তাকে সিসিইউতে নিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসে পানি জমে যাওয়ায় সোমবার রাত পৌনে ৪টার দিকে তাকে হাসপাতালের সপ্তম তলার কেবিন থেকে চতুর্থ তলায় সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তিনি শারীরিকভাবে খুব দুর্বল বলে জানা গেছে।

এর আগে ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।

৭৮ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।

এর আগেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১০ জুন রাত পৌনে ৩টার দিকে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

গত বছরের ১০ জুন গভীর রাতে বুকে ব্যথা নিয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। পরে দ্রুত এনজিওগ্রাম করে তার হার্টে একটি রিং বসানো হয়। হার্টের দুটি ব্লক এখনো রয়ে গেছে।

এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। গত বছরের ২২ আগস্টও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ পর ২৮ আগস্ট ফের হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ভর্তি করানো হয়। দুদিন হাসপাতালে থাকার পর ৩১ আগস্ট বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে গিয়েছিলেন। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে ‘সাময়িক মুক্তি’ দেয় সরকার। এর পর কয়েক দফা তার দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

যুগান্তর ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

ঘটনাপ্রবাহ : খালেদা জিয়ার চিকিৎসা